কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিদায় কবিতা এক বেদনাতুর ব্যাথাভরা কবিতা। এই কবিতাতে একটি শিশু তার মায়ের কাছে কতটা প্রয়োজনীয় তা তুলে ধরেছেন। শিশুটি প্রায় মৃত্যু সজ্জায় এবং তার মায়ের প্রতি আকুতি এই কবিতায় কবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
বিদায় কবিতা (BIDAI KOBITA)
তবে আমি যাই গো তবে যাই
ভোরের বেলা শূন্য কোলে
ডাকবি যখন খোকা বলে,
বলব আমি, ‘নাই সে খোকা নাই। ‘
মা গো, যাই। হাওয়ার সঙ্গে হাওয়া হয়ে
যাব মা, তোর বুকে বয়ে,
ধরতে আমায় পারবি নে তো হাতে।
জলের মধ্যে হব মা, ঢেউ,
জানতে আমায় পারবে না কেউ—
স্নানের বেলা খেলব তোমার সাথে। বাদলা যখন পড়বে ঝরে
রাতে শুয়ে ভাববি মোরে,
ঝর্ঝরানি গান গাব ওই বনে।
জানলা দিয়ে মেঘের থেকে
চমক মেরে যাব দেখে,
অমার হাসি পড়বে কি তোর মনে। খোকার লাগি তুমি মা গো,
অনেক রাতে যদি জাগ
তারা হয়ে বলব তোমায়, ‘ঘুমো!’
তুই ঘুমিয়ে পড়লে পরে
জ্যোৎস্না হয়ে ঢুকব ঘরে,
চোখে তোমার খেয়ে যাব চুমো। স্বপন হয়ে আঁখির ফাঁকে
দেখতে আমি আসব মাকে,
যাব তোমার ঘুমের মধ্যিখানে।
জেগে তুমি মিথ্যে আশে
হাত বুলিয়ে দেখবে পাশে—
মিলিয়ে যাব কোথায় কে তা জানে। পুজোর সময় যত ছেলে
আঙিনায় বেড়াবে খেলে,
বলবে ‘খোকা নেই রে ঘরের মাঝে’।
আমি তখন বাঁশির সুরে
আকাশ বেয়ে ঘুরে ঘুরে
তোমার সাথে ফিরব সকল কাজে। পুজোর কাপড় হাতে করে
মাসি যদি শুধায় তোরে,
‘খোকা তোমার কোথায় গেল চলে। ‘
বলিস ‘খোকা সে কি হারায়,
আছে আমার চোখের তারায়,
মিলিয়ে আছে আমার বুকে কোলে। ‘
বিদায় কবিতা টির সারাংশ :
এই কবিতার প্রথান স্তবকে খোকা বলছে তার মাকে যে সে যদি মারা যায় তাহলে তার মা ভোর বেলায় খোকা বলে কাকে ডাকবে। খোকাটি আরও বলছে যে তুমি যদি ভোর বেলায় খোকা বলে ডাকো আমি তার উত্তরে আমি কি বলবো জানো, ‘নাই সে খোকা নাই’ এ যেন জীবন মরণের সন্দিক্ষনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুর কল্পনা।
কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে শিশুটির আকুতির কথা কবি তুলে ধরেছেন। শিশুটি বলছে যে মা আমি হাওয়া হয়ে তোর বুকে বয়ে যাবো কিন্তু মা তুই তোর হাত দিয়ে ধরতে আমায় পারবি না।
পারবি না তুই আমায় বুকে তুলে নিতে, কিন্তু আমি থাকবো তোর বুকের কাছে। শিশুটি আরো বলছে যে সে জলের ঢেউ হবে এবং সে যখন স্নান করতে যাবে তখন সে জালের ঢেউ হয়ে তার মায়ের সাথে খেলা করবে।
এই কবিতায় খোকা আরো বলছে যে, মা তুমি যখন তুইমি ঘুমিয়ে যাবে তখন আমি জ্যোৎস্না হয়ে তোমার ঢুকব তোমার ঘরে। তোমার চোক চুমু খেয়ে তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো।
খোকেটি আরো আকুতি করেছে যে পুজোর সময় যত ছেলে আঙিনায় বেড়াবে আর আমি তখন বাঁশির সুরে আকাশ বেয়ে ঘুরে ঘুরে তোমার সাথে ফিরব তোমার সাথে।
খোকা সবশেষে বলেছে যে মা কেউ সুধাই তোমায় খোকা কোথায় গেল। মা তুমি বলবে যে আমি আছি তোমার চোখের তারায় এবং মিলিয়ে আছি তোমার বুকে ও কোলে।