প্রশ্ন কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৪টি

You are currently viewing প্রশ্ন কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৪টি

প্রশ্ন কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি প্রশ্ন এই নামে তার বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ মোট চারটি কবিতা লিখেছেন। যেমন শিশু কাব্যগ্রন্থ প্রশ্ন, সঞ্চয়িতা কাব্যগ্রন্থ প্রশ্ন, এই প্রত্যেকটি কবিতাতে কবি বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। এখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারটি প্রশ্ন কবিতা নিচে বর্ণিত করা হলো।

এখানে কবি তার প্রথম প্রশ্ন কবিতায় একজন শিশু কেমন করে তার মায়ের কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে তা তুলে ধরেছেন

কবিতার দ্বিতীয় প্রশ্ন কবিতা আমাদের মহাবিশ্বের যে গতিবিধি সেই নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন এই কবিতার মাধ্যমে তিনি আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।

কবি তার তৃতীয় প্রশ্ন কবিতা তিনি ভগবানের কাছে মানুষ যেমন তার নানান ধরনের প্রশ্ন করেন সেই ধরনের প্রশ্ন গুলিকে এই কবিতার মাধ্যমে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। যেটা থেকে আমরা অতি সহজেই জানতে পারছি মানুষ কেমন হয় ভগবান অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রশ্ন করে থাকেন।

কবিতা চতুর্থ তা শেষ কবিতায় একজন প্রেমিক প্রেমিকার কাছে নানা ধরনের প্রশ্ন করেন সেই প্রশ্ন নিয়ে এই কবিতায় প্রেক্ষাপটে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। এই কবিতা থেকে আমরা জানতে পারি কেমন হবে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে থাকে।

৪ টি প্রশ্ন কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর :

১.প্রশ্ন

মা গো, আমায় ছুটি দিতে বল্‌,
        সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা।
এখন আমি তোমার ঘরে বসে
        করব শুধু পড়া-পড়া খেলা।
তুমি বলছ দুপুর এখন সবে,
        নাহয় যেন সত্যি হল তাই,
একদিনও কি দুপুরবেলা হলে
        বিকেল হল মনে করতে নাই?
আমি তো বেশ ভাবতে পারি মনে
        সুয্যি ডুবে গেছে মাঠের শেষে,
বাগ্‌দি-বুড়ি চুবড়ি ভরে নিয়ে
        শাক তুলেছে পুকুর-ধারে এসে।
আঁধার হল মাদার-গাছের তলা,
        কালি হয়ে এল দিঘির জল,
হাটের থেকে সবাই এল ফিরে,
        মাঠের থেকে এল চাষির দল।
মনে কর্‌-না উঠল সাঁঝের তারা,
        মনে কর্‌-না সন্ধে হল যেন।
রাতের বেলা দুপুর যদি হয়
        দুপুর বেলা রাত হবে না কেন।

(শিশু কাব্যগ্রন্থ)


২.প্রশ্ন

চতুর্দিকে বহ্নিবাষ্প শূন্যাকাশে ধায় বহুদূরে,
     কেন্দ্রে তার তারাপুঞ্জ মহাকাল-চক্ররথে ঘুরে।
          কত বেগ, কত তাপ, কত ভার, কত আয়তন,
                   সূক্ষ্ম অঙ্কে করেছে গণন
          পণ্ডিতেরা লক্ষ কোটি ক্রোশ দূর হতে
                        দুর্লক্ষ্য আলোতে।
               আপনার পানে চাই,
          লেশমাত্র পরিচয় নাই।
     এ কি কোনো দৃশ্যাতীত জ্যোতি।
কোন্‌ অজানারে ঘিরি এই অজানার নিত্য গতি।
     বহুযুগে বহুদূরে স্মৃতি আর বিস্মৃতি-বিস্তার,
               যেন বাষ্পপরিবেশ তার
     ইতিহাসে পিণ্ড বাঁধে রূপে রূপান্তরে।
“আমি’ উঠে ঘনাইয়া কেন্দ্র-মাঝে অসংখ্য বৎসরে।
সুখদুঃখ ভালোমন্দ রাগদ্বেষ ভক্তি সখ্য স্নেহ
          এই নিয়ে গড়া তার সত্তাদেহ;
     এরা সব উপাদান ধাক্কা পায়, হয় আবর্তিত,
                   পুঞ্জিত, নর্তিত।
          এরা সত্য কী যে
               বুঝি নাই নিজে।
          বলি তারে মায়া–
যাই বলি শব্দ সেটা, অব্যক্ত অর্থের উপচ্ছায়া।
               তার পরে ভাবি,
এ অজ্ঞেয় সৃষ্টি “আমি’ অজ্ঞেয় অদৃশ্যে যাবে নাবি।
     অসীম রহস্য নিয়ে মুহূর্তের নিরর্থকতায়
          লুপ্ত হবে নানারঙা জলবিম্বপ্রায়,
     অসমাপ্ত রেখে যাবে তার শেষকথা
                   আত্মার বারতা।
     তখনো সুদূরে ঐ নক্ষত্রের দূত
ছুটাবে অসংখ্য তার দীপ্ত পরমাণুর বিদ্যুৎ
                   অপার আকাশ-মাঝে,
                        কিছুই জানি না কোন্‌ কাজে।
বাজিতে থাকিবে শূন্যে প্রশ্নের সুতীব্র আর্তস্বর,
                   ধ্বনিবে না কোনোই উত্তর।


৩.প্রশ্ন

ভগবান , তুমি যুগে যুগে দূত , পাঠায়েছ বারে বারে
                    দয়াহীন সংসারে ,
তারা বলে গেল  ‘ক্ষমা করো সবে ‘, বলে গেল  ‘ভালোবাসো —
                    অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো ‘ ।
বরণীয় তারা , স্মরণীয় তারা , তবুও বাহির-দ্বারে
আজি দুর্দিনে ফিরানু তাদের ব্যর্থ নমস্কারে ।

আমি-যে দেখেছি গোপন হিংসা কপট রাত্রিছায়ে
               হেনেছে নিঃসহায়ে ,
আমি-যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
               বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে ।
আমি-যে দেখিনু তরুণ বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে
কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে ।

কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে , বাঁশি সংগীতহারা ,
                 অমাবস্যার কারা
লুপ্ত করেছে আমার ভুবন দুঃস্বপনের তলে ,
                 তাই তো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে —
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু , নিভাইছে তব আলো ,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ , তুমি কি বেসেছ ভালো ।


৪.প্রশ্ন

কো তুঁহুঁ বোলবি মোয় ।
হৃদয়মাহ মঝু জাগসি অনুখন,
আঁখউপর তুঁহুঁ রচলহি আসন।।
অরুণ নয়ন তব মরমসঙে মম
    নিমিখ ন অন্তর হোয়।।

হৃদয়কমল তব চরণে টলমল,
নয়নযুগল মম উছলে ছলছল–
প্রেমপূর্ণ তনু পুলকে ঢলঢল
    চাহে মিলাইতে তোয়।।

বাঁশরিধ্বনি তুহ অমিয়গরল রে,
হৃদয় বিদারয়ি হৃদয় হরল রে,
আকুল কাকলি ভুবন ভরল রে–
    উতল প্রাণ উতরোয়।।

হেরি হাসি তব মধুঋতু ধাওল,
শুনয়ি বাঁশি তব পিককুল গাওল,
বিকল ভ্রমরসম ত্রিভুবন আওল–
    চরণকমলযুগ ছোঁয়।।

গোপবধূজন বিকশিতযৌবন,
পুলকিত যমুনা, মুকুলিত উপবন–
নীলনীর’পরে ধীর সমীরণ
    পলকে প্রাণমন খোয়।।

তৃষিত আঁখি তব মুখ’পর বিহরই,
মধুর পরশ তব রাধা শিহরই–
প্রেমরতন ভরি হৃদয় প্রাণ লই
    পদতলে আপনা থোয়।।

কো তুঁহুঁ কো তুঁহুঁ সব জন পুছয়ি
অনুদিন সঘন নয়নজল মুছয়ি–
যাচে ভানু, সব সংশয় ঘুচয়ি
    জনম চরণ’পর গোয়।।


Leave a Reply