কবি সুকুমার রায় তাঁর এই সৎপাত্র (Sot Patro Kobita) কবিতাটিতে সেই সময়কার বিবাহ নামের যে প্রহসন তা তার এই কবিতাটির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সেই সময়কার সমাজে প্রচলন ছিল যতই কালো, বা অশিক্ষিত হোক না কেন বা দেখতে পেঁচার মতন হোক না কেন তাতে কোনো ক্ষতি নাই। তার বংশের অন্য সদস্যেরা চোর বা ডাকাত হোক না কেনো তাতে কোনো দোষ নেই।
কিন্তু পাত্র যদি তারা উচ্চ ঘর, ও বংশধর হয় তা হলেই বিবাহ হয়ে যাবে। অর্থাৎ পাত্র নির্বাচনে কেবল মাত্র উচ্চ ঘর ও উচ্চ বংশধারাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। কবি সুকুমার রায় তার কবিতার মাধ্যমেই কুলষিত দিকটি আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।
সৎপাত্র
শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে—
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?
মন্দ নয় সে পাত্র ভালো
রঙ যদিও বেজায় কালো ;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;
বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই—
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে ।
বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়—
কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় ।
মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার—
একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;
আরেকটি সে তৈরী ছেলে,
জাল করে নোট গেছেন জেলে ।
কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়
যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় ।
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে
পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংসরাজের বংশধর !
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয় গঙ্গারামের ।—
যহোক, এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে ?